বাংলাদেশে উগ্রবাদ

হাত ছিল। ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার ঘটনা কিংবা গাইবান্ধার সাঁওতালদের ঘটনাতেও ভূ-রাজনৈতিক বিষয় জড়িত। ধর্মীয় উগ্রবাদের ধূয়াতুলে মূলত একটি সুবিধাবাদী শ্রেণী সব সময় নিজেদের স্বার্থ কব্জা করে নেয়। সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষের আখেরে না স্বার্থ থাকে, না সম্পৃক্ততা থাকে।

অন্যদিকে ভূ-রাজনৈতিক বিষয়ের মত আন্তর্জাতিক বিষয়ের সাথেও স্বার্থ জড়িত। সোভিয়েত প্রভাবকে টেক্কা দিতে আশির দশকে তৎকালীন আমেরিকা আলকায়দা সৃষ্টি করে। যার ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশও আন্তর্জাতিক উগ্রবাদ, জঙ্গিবাদের সাথে জড়িয়ে পড়ে। তৎকালীনও জেনারেল জিয়া সরকার ভারত ও সোভিয়েত বলয় থেকে বের হয়ে আমেরিকান বলয়ে ঢুকতে বিষয়টিতে নিরবতা দেখায়, হয়তো গোপনে সমর্থনও জানায়। যেটা পরবর্তীতে ধর্মীয় উগ্রবাদকে বংলাদেশে উৎসাহিত করে। ২০০১ খ্রিস্টাব্দের ঐক্যজোট সরকারের সময় প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে জেএমবি, জেএমজেবি ছাড়াও বিভিন্ন উগ্রবাদী গ্রুপের সাথে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সখ্যতার প্রমাণ পাওয়া যায়। ফলশ্রুতিতে ২০০৫ খ্রীস্টাব্দে উগ্রবাদীরা দেশের ৬৩টি জেলায় বোমা হামলার মত ঘটনা ঘটানোর মত শক্তি দেখায়। সম্প্রতি গুলশান হামলা বড় রকমের ধাক্কা দিয়েছে, যদিও এর উৎস মূল এখনও স্পষ্ট নয়। তবে এটা যে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের অংশ সেটা নিশ্চিত। এক্ষেত্রেও ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে বিপথগামী তরুণদের জড়ানো হচ্ছে নিজেদের স্বার্থে মহাদেশ ভিত্তিক অস্থিতিশীলতা বজায় রাখতে। দলছুট হয়ে মূল শ্রোতের বাইরে গিয়ে বিপথগামী তরুণরা কতটা অসহায় হয়ে পড়ে সেটা উগ্রবাদের রাস্তা ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা দু একজন তরুণের কথা শুনলেই বোঝা যায়। কিন্তু উগ্রবাদী গ্রুপ গুলো ঐসব তরুণদের বিষণ্ণতা ও আর্থিক দীনতাকে পুজি করে দলে ভেড়ায়। তৃতীয় বিশ্বের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ধর্মীয় উগ্রবাদ-সন্ত্রাসবাদ বেশ প্রভাব বিস্তার করে। যেমনটা বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, পাকিস্তানসহ এই অঞ্চলের রাজনীতি ও নির্বাচন ব্যবস্থা দেখলে প্রতীয়মান হয়।

মানুষের ধর্মের প্রতি একটা দুর্বলতা এবং ধর্মগ্রন্থে বর্ণীত পরকালীন জীবনে ভোগের লোভ সহজ রাস্তায় পেতে গিয়ে বিপথগামী হয়ে পড়ে। এই ক্ষেত্রে ধর্ম গ্রন্থগুলোর অস্পষ্ট বিষয়গুলোর আরো অনেক সহজ ব্যাখ্যা প্রয়োজন। এবং স্কুল কলেজ পর্যায়ে উগ্রবাদ নিয়ে ও তার ক্ষতিকর দিক নিয়ে সহজ অথচ বিস্তারিত পাঠ পাঠ্য তালিকায় অন্তর্ভূক্তি করা যেতে পারে। বাবা মায়েদের সন্তানের প্রতি আরো বেশি বন্ধু সুলভ আচরণ বিষয়টার সমাধান হতে পারে।